স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুমিল্লা সদরের দৌলতপুর পূর্বপাড়া রেলওয়ে রোড এলাকার সৌদিয়া হাউজ থেকে গিয়াসউদ্দিন (৫০) নামের এক গৃহকর্তার হাত বাঁধা ঝুলন্ত লাশ উদ্বার করেছে পুলিশ। তবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ করেছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদকে কেন্দ্র করে স্ত্রী ও স্ত্রী’র বড় ভাই পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলম ভগ্নিপতি গিয়াসউদ্দিনকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছেন। । অপর দিকে স্ত্রীর স্বজনদের ভাষায় গিয়াসউদ্দিন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল।
নিহত গিয়াসউদ্দিন বুড়িচং উপজেলার কাবিলা এলাকার দুর্গাপুর (নোয়াপাড়া) গ্রামের তোফায়েল আহম্মেদের ছেলে।
মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিজ ঘর থেকে হাত-পা বাধাঁ অবস্থায় গিয়াস উদ্দিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর আগে গিয়াস দৌলতপুর ছায়া বিতান রেল-লাইনের পশ্চিম পাশে ‘সৌদিয়া হাউজ’ নামক তিন তলা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। সে ওই বাড়ির নিচতলায় ‘সৌদিয়া টেইলার্স’ নামের দোকান খুলে টেইলার্স কাজ করত। তার বাড়ির পশ্চিম পার্শ্ব ঘেষে যৌথ সিঁড়িতে রয়েছে স্ত্রী’র বড় ভাই পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলমের চার তলা ‘মোল্লা হাউজ’ নামের বাড়ি। মাহে আলম কুমিল্লা সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মৃত. আবদুল মালেকের ছেলে। সে বর্তমানে লক্ষীপুর একটি ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে গিয়াসউদ্দিনের সাথে তার স্ত্রী সাজেদা বেগমের সাথে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। মঙ্গলবার সকালে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়ার জের ধরে স্ত্রী ও তার বড় ভাই পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলমসহ মিলে গিয়াসকে মারধর করে হাত বেঁধে বাসার সামনে ডোবার ( রেলওয়ের জায়গার পানি জমে থাকা গর্তে) মধ্যে ফেলে রাখে। বিকেলের দিকে বাড়ির নিচতলায়‘সৌদিয়া টেইলার্স’ থেকে হাত বাঁধা গিয়াসউদ্দিনের ঝুলন্ত লাশ উদ্বার করে পুলিশ। গিয়াস উদ্দিনের এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। কন্যা বিবাহিত ও শিশু পুত্র অশোকতলা ইকরা স্কুলে পড়াশুনা করে।
অপরদিকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলমের স্ত্রী মিসেস খোদেজা আলম জানান, গিয়াসউদ্দিন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। সে প্রায়ই স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ করত। মঙ্গলবার সকালে তারা আবারো ঝগড়া করে। সে আমার ননদকে (সাজেদা বেগম) মারধর করে। আমার স্বামী তার বোনকে উদ্বার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়। পরে ৯৯৯ এ খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঝুলন্ত লাশ উদ্বার করে। তিনি আরো জানান, ঝগড়ার জের ধরে স্ত্রী তাকে মারধর করে হাত বেধে ডোবায় ফেলে রাখায় রাগে-ক্ষোভে গিয়াসউদ্দিন সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে।
নিহতের ভাই কবির হোসেন জানান, আমার ভাইকে হত্যা করেছে তার স্ত্রী ও তার ভাই। গত কিছু দিন আগে বোনের স্বামী গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাহে আলম বাড়ির জায়গা ও ক্রয় করে। দীর্ঘদিন হয়ে গেলও সম্পত্তির কোন টাকা দেয়নি। সকালে তাকে মারধর করে হাত-পা বেঁধে রাখে। তারপর তাকে হত্যাকরে পাখার সাথে ঝুলে রাখে। আমি মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। তারা নাকি অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর সাথে কথা বলেছে।
কোতয়ালী মডেল থানার ইন্সপেক্টর ( তদন্ত) মোঃ সালাহ উদ্দিন জানান, দুপুরে কুমিল্লা দৌলতপুর রেলওয়ে রোড এলাকা একটি বাসা থেকে এক গৃহকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আত্মহত্যা না হত্যা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে এই ঘটনায় মৃত গৃহকর্তার স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।
রাত ১০ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।