শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বুড়িচংয়ে বিল্লাল হত্যায় জড়িত সন্দেহে কিশোর আটক

আজকের কুমিল্লা ডট কম :
মার্চ ৩০, ২০২০
news-image

 

সাকিব আল হেলাল:
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ১নং ময়নামতি ইউনিয়নের নারায়নসার গ্রামের সবুজ মিয়ার ছেলে মোঃ বিল্লাল হোসেন(১৭)এর লাশ গত ২৬শে মার্চ(বৃহস্পতিবার) রাতে কালাকচুয়ায় খন্দকার কাজীমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের উপর থেকে উদ্ধার করে থানা পুলিশ।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়,বৃহস্পতিবার(২৬ মার্চ) রাত ১০ টায় ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের   এক পাশে ক্ষত বিক্ষত লাশ দেখে স্থানীয় লোকজন তাকে চিনতে পেরে তার বাড়িতে খবর দেয়। লোকজন বলাবলি করছিল যে এটা সড়ক দুর্ঘটনা নয়। কেউ হয়তো হত্যা করে লাশ ফেলে চলে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেবার জন্য । সড়ক দূর্ঘটনার খবর পেয়ে ময়নামতি হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে । তারা নিহতের আঘাত দেখে ধারনা করে এটা সড়ক দূর্ঘটনা নয় তাকে কেউ হত্যা করে ফেলে গেছে। পরে নিহতের পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়।

ঘটনার সূত্র থেকে জানা যায়,ঘটনার দিন বিকালে ফারুক(১৩), নাজমুল (১৪), বিল্লাল ( মামাত-ফুফাত ভাই) আড্ডার উদ্দেশ্যে বিল্লালকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে দুজনে একসাথে বের হয়।অথচ রাত ১০টায় ফারুক বাড়িতে অপর দিকে বিল্লালের লাশ মহাসড়কের পাশে পাওয়া যায়।এ সন্দেহে বিল্লালের পরিবার ফারুককে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

সন্ধেহ ভাজন আটককৃত আসামী ফারুক সদর উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম ২ নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মৃত এমরান হোসেনের ছেলে।

এদিকে ফারুকের পরিবারের দাবি,ফারুক -নাজমুল একসাথে সন্ধ্যার মধ্য বাড়িতে চলে আসে। সে মুহূর্তে বিল্লালের সাথে বিল্লালের আরেক বন্ধু রেজাউল( ২১) ছিল। তখন রেজাউল ও বিল্লাল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আড্ডা করছিলো”।

এ বিষয়ে বিল্লালের বাবা সবুজ মিয়ার বলেন, আমার ভাগিনা ফারুক আমার ছেলেকে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাত ৮ টার সময় আমার ছেলে বিল্লালকে আমি ভাত খাওয়ার জন্য ফোন করি। তখন আমার ফোন রিসিভ করে হাইওয়ে থানা পুলিশ। পুলিশ আমাকে জানায় আমার ছেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আমরা সবাই তাৎক্ষনিক সেখানে উপস্থিত হয়ে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসি।

কিছুক্ষন পর আমরা লাশের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখি এটা সড়ক দুর্ঘটনা নয়।তার শরীলে যে আঘাত তা সড়ক দূর্ঘটনার নয় কেউ ছেলেকে খুন করেছে। সে মূহুর্তে আমার বোন(ফারুকের মা) আমাদের বাড়িতে আসলে আমরা তাকে আটক করে আমার ভাগিনা ফারুককে নিয়ে আসতে বলি। ফারুক আসলে আমরা পুলিশকে ফোন করে এনে আমার ছেলের লাশ ও ফারুককে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি”।

ফারুকের মা জান্নাতুল ফেরদৌসি জানান, ফারুক বাড়ি থেকে বের হওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে বাড়িতে চলে আসে। ফারুক সন্ধ্যার পূর্বে বাড়িতে চলে আসলে আমি তাকে দোকানে খরচের জন্য পাঠাই এবং কিছুক্ষণের মধ্য সে খরচ নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। রাত ১০ টায় ফেসবুকে বিল্লাল সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে এমন একটি খবর দেখে আমি পরিবারের সকলকে নিয়ে বিল্লালদের বাড়িতে যাই।তাদের বাড়িতে যাবার কিছুক্ষন পর হঠাৎ বিল্লালের নানা মুছা মিয়া আমাকে বলে সামাজিক ভাবে বসে তারা এ বিষয় সমাধান করে ফেলতে।আমি বলি কি বিষয়? তখন বিল্লালের নানা বলে ফারুক – বিল্লালকে হত্যা করেছে।তাই আমরা আত্নীয় স্বজনরা সবাই বসে পুলিশ মামলা ছাড়া বিষয়টা সমাধান করতে চাই।আমি বলি আমার ছেলে কখনো তা করতে পারে না। কারন সন্ধ্যার পর থেকে আমার ছেলে আমার ঘরে ছিলো। আমি চাই সঠিক হত্যাকারী কে? মৃত্যুর সঠিক কারন তদন্ত সাপেক্ষে জানতে চাই। আমার ছেলেকে ফাঁসানো হবে কেন? এই নিয়ে তাদের সাথে আমার বাকবিতন্ডা চলছিল”।

ঘটনার রাত সাড়ে ১২টায় নিহত বিল্লালের নানা মুছা মিয়া বুড়িচং থানায় ফোন করেন। তখন দেবপুর ফাঁড়ির অতিরিক্ত উপ-পরিদর্শক মোঃ জহির ঘটনা স্থলে এসে সুরতহাল তৈরী করে লাশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। সাথে ফারুকসহ তিন জনকে জিজ্ঞসাবাদ করার জন্য সন্দেহজনকভাবে আটক করে দেবপুর ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মোজাম্মেল হক ( পিপিএম) বলেন, বিল্লাল হত্যাকারির সন্দেহে ফারুক (জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী ১৩) নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। ৩০২,২০১, ৩৪ ধারায় মামলা আসামিকে কুমিল্লা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা তদন্ত বরছেন দেবপুর ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক নন্দন চন্দ্র সরকার। তদন্তের পর যদি ফারুক অপরাধী হয় এবং কিশোর প্রমানিত হয় তাহলে কিশোর আইনে যে সাঁজা হয় সে অনুযায়ী তার সাঁজা হবে। তা তদন্তের পর জানা যাবে”।

আর পড়তে পারেন