শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুমিল্লার বরুড়ার একজন সফল লেবু চাষীর গল্প

আজকের কুমিল্লা ডট কম :
মে ৭, ২০২০
news-image

 

মাছুম কামাল:

চারপাশে বিস্তীর্ণ ভূমি জুড়ে সবুজ লেবু গাছের সমাহার, গাছে গাছে অসংখ্য রকমের লেবু। গন্ধে ম-ম করছে এলাকা। বলছি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পৌরসভাধীন শুশুন্ডা সর্দার বাড়ির একজন সফল কৃষক মোঃ সুয়া মিয়ার (৬২) কথা।

কিভাবে শুরুটা করলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে কলা চাষ করতাম আমি। সেই সুবাদে বরুড়া উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর আগে খাগড়াছড়িতে ট্রেনিং এ যাই।

জানালেন, সেসময় খাগড়াছড়িতে লেবু বাগান দেখে নিজের এলাকায় লেবু চাষের স্বপ্ন বুনেন তিনি। যেই চিন্তা সেই কাজ। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমে নিজের আগ্রহে স্থানীয় নার্সারী থেকে ৫ টি, বরুড়া কৃষি অফিস থেকে ১০টি, নোয়াখালী থেকে ২০টি গাছ ক্রয় করে নিজের বাড়ির আঙ্গিনার ১০ শতাংশ জায়গায় ৩৫টি গাছ লাগান তিনি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

বরুড়া কৃষি অফিসের সহায়তায় ট্রেনিং এর সুবাদে বিভিন্ন জেলায় যান তিনি। সেখানে প্রাপ্ত সম্মানির টাকায় কৃষি কর্মকতাদের সহযোগিতায় ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন জাতের লেবু গাছের চারা ও কলম সংগ্রহ করেন।

নিজের সার্বক্ষনিক পরিচর্যায় ক্রমান্বয়ে এখন প্রায় ৬৮টি শতাংশ জায়গায় ৪টি বাগানে ৪২ প্রজাতির প্রায় ৫০০ লেবু গাছ রয়েছে সুয়া মিঞার। যার মধ্যে সিডলেস লেবু, সাতকড়ি লেবু, এলাচি লেবু, বারি লেবু, জারা লেবু, কট লেবু, বাদামী লেবু, গন্ধরাজ লেবু, সালাতী লেবু, দেশী কাগজি লেবু উল্লেখযোগ্য। এদের অধিকাংশই বারো মাসি জাতের লেবু গাছ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লেবু বাগানের পাশাপাশি তিনি ক্ষুদ্র পরিসরে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, জামরুল, নারিকেল, মরিচ, হলুদ, আদা, থানকুনী, ড্রাগন ফল সহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ফল, মসলা জাতীয় শস্য উৎপাদন করেন। যা থেকে বার্ষিক ২-৩ লাখ টাকায় আয় করেন। যা দ্বারা তার পরিবারের ৫ জনের সংসার চলে।

লেবু বাগান আর এই ক্ষুদ্র পরিসরের বাগানের আয় দিয়েই নিজের সন্তানদের পড়ালেখাও করাচ্ছেন তিনি। কথায়-কথায় জানালেন তার বড় ছেলে সিলেট শাহ জালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত, মেঝো ছেলে বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজের ছাত্র।

সুয়া মিয়া জানান, “আমার এই লেবু বাগান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা, কুমিল্লা কৃষি গবেষণা ও বরুড়া কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রায় প্রতি সপ্তাহে তদারকি করে থাকেন এবং সময়ে সময়ে সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতাও করে থাকেন।

তিনি জানান, বাগানে উৎপাদিত লেবু মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায় স্থানীয় প্রবাসীদের মাধ্যমে। এবং কুরিয়ারের মাধ্যমেও পাঠিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করি।

লেবু বাগান করতে কি কি প্রতিবন্ধকতা আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমার বিদ্যুৎের সমস্যা আছে। একটি বাগানে বিদ্যুৎ থাকলেও অন্য বাগান গুলোতে পানি সেচের জন্য বিদ্যুৎ নেই, অনেক চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। সবগুলো বাগানে বিদ্যুৎ পেলে উৎপাদন আরো বাড়াতে পারবো’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরুড়া কৃষি অফিসের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, ‘সুয়া মিয়া একজন আদর্শ কৃষক। এককথায় বলা চলে, উনি অত্যন্ত পরিশ্রমী ও স্পষ্টবাদী মানুষ। উনার বিদ্যুৎের সমস্যা নিয়ে আমরা একবার উদ্যোগ নিয়েছি, কিন্তু মাপের সমস্যা দেখিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ উনাকে বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত করেছে। তবে করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে আমরা আবারও উনার বিদ্যুৎের সমস্যা নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিবো।’

আর পড়তে পারেন